কলাবতী ফুল: বর্ষার রঙিন সৌন্দর্য

এই ফুলটি বিভিন্ন নামে পরিচিত: কলাবতী, সর্বজয়া কিংবা বৈজয়ন্তী

ইংরেজি নাম: Indian shot, Canna
বৈজ্ঞানিক নাম: Canna indica
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে এর নাম দিয়েছিলেন "সর্বজয়া"। এই ফুল সাধারণত লাল, হলুদ বা লাল-হলুদ মেশানো রঙের হয় এবং বর্ষাকালে ফোটে। 


বর্ষাকাল এলে প্রকৃতি যেন নতুন রূপ ধারণ করে। চারদিকে সবুজের সমারোহ, আর তার মাঝে ফুটে ওঠে নানা রঙের ফুল। এমনই একটি ফুল হলো কলাবতী, যা বাংলাদেশের গ্রাম-শহরে সহজেই চোখে পড়ে। কলাবতী ফুল না শুধু দৃষ্টিনন্দন, এর রয়েছে ঔষধি গুণও। আজকের এই ব্লগ পোস্টে আমরা কলাবতী ফুল সম্পর্কে বিস্তারিত জানব – তার বর্ণনা, চাষ পদ্ধতি, উপকারিতা এবং ঔষধি ব্যবহার।

কলাবতী ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম Canna indica, যা কানাসি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এর অন্যান্য নাম সর্বজয়া বা বৈজয়ন্তী। এর আদি নিবাস ক্যারিবীয় অঞ্চল এবং আমেরিকার ক্রান্তীয় এলাকা, কিন্তু এখন এটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে, বিশেষ করে এশিয়ায় জনপ্রিয়। কলাবতী একটি বহুবর্ষজীবী কন্দজাতীয় উদ্ভিদ, যার পাতা কলা গাছের পাতার মতো লম্বা এবং সূচালো। গাছের উচ্চতা ৩০ সেন্টিমিটার থেকে ২-৩ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। পাতা উপবৃত্তাকার, প্রায় অর্ধ মিটার লম্বা এবং ৩০ সেন্টিমিটার চওড়া। ফুল গুচ্ছাকারে ফোটে, কাণ্ডের অগ্রভাগে। ফুলের রং বিভিন্ন – সাদা, ক্রিম সাদা, কমলা, লাল, হলুদ বা লাল-হলুদ মিশ্রিত। ফুলগুলো গন্ধহীন, কিন্তু তাদের কোমল পাপড়ি এবং উজ্জ্বল রং সহজেই মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বর্ষাকালে, বিশেষ করে বৈশাখ থেকে শ্রাবণ মাসে এ ফুল বেশি ফোটে। ফুল থেকে ফল হয়, যা পরিণত হলে ফেটে গোলাকার বীজ বের হয়। এই বীজগুলো বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র, তারা এ থেকে রুদ্রাক্ষের মালা তৈরি করে।

কলাবতী ফুলের চাষ খুব সহজ। এটি যেকোনো পরিবেশে খাপ খায়, তবে স্যাঁতসেতে জায়গা এবং হালকা ছায়ায় ভালো জন্মায়। কন্দ বা বীজ দিয়ে বংশবিস্তার হয়। কন্দগুলো আদা-ওলের মতো, একবার রোপণ করলে বছরের পর বছর ফুল দেয়। টবে বা মাটিতে চাষ করা যায়, খুব বেশি পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। ভেজা মাটিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, তাই বাংলাদেশের আবহাওয়া এর জন্য উপযোগী। শীতকালে কন্দ শুকিয়ে যায়, কিন্তু বর্ষায় আবার নতুন গাছ জন্মায়। উদ্যানপালকরা এটি ঝোপাকার করে চাষ করেন, যাতে সৌন্দর্য আরও বাড়ে।

কলাবতী ফুলের উপকারিতা অনেক। এটি মূলত সৌন্দর্যবর্ধক ফুল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। উদ্যান, সড়কের পাশ, সড়ক বিভাজক, বাসা-বাড়ি বা পরিত্যক্ত জমিতে লাগিয়ে পরিবেশকে সুন্দর করা যায়। ফুল কেটে পানিতে রাখলে ২-৩ দিন সতেজ থাকে, তাই বাড়ির সাজসজ্জায় ব্যবহার হয়। এছাড়া, এর ঔষধি গুণও উল্লেখযোগ্য। কলাবতী গাছের পাতা, ফুল, মূল এবং বীজ বিভিন্ন রোগের চিকিত্সায় ব্যবহৃত হয়। এটি ইনফ্লেমেশন কমায়, ব্যথা এবং জ্বর নিবারণ করে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে শরীরকে শক্তিশালী করে। শারীরিক দুর্বলতা, আমাশয়, ঘা শুকানো এবং জন্ডিসের মতো রোগে এর ব্যবহার হয়। ঐতিহ্যগত চিকিত্সায় এটি প্রাকৃতিক ঔষধ হিসেবে পরিচিত। বাস্তুশাস্ত্র অনুসারে, বাড়িতে কলাবতী গাছ রাখলে ধন-সম্পদ এবং সুখ বয়ে আনে বলে বিশ্বাস করা হয়।




সারাংশে বলা যায়, কলাবতী ফুল শুধু প্রকৃতির উপহার নয়, এটি আমাদের জীবনে সৌন্দর্য এবং স্বাস্থ্যের মিশ্রণ। যদি আপনার বাড়িতে একটু জায়গা থাকে, তাহলে অবশ্যই এটি চাষ করুন। বর্ষায় তার রঙিন ফুল দেখে মন ভরে যাবে, আর প্রয়োজনে ঔষধি হিসেবেও কাজে লাগবে। প্রকৃতির এই ছোট্ট উপহারকে আমরা যত্ন করে রাখি, যাতে ভবিষ্যত প্রজন্মও এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে। (শব্দ সংখ্যা: প্রায় ৫২০)



মন্তব্যসমূহ